তুমি, আর সে
ইবরার আমিন সালমান
দিয়া আর রাফি পাশাপাশি বসে আছে. দুজনের মুখের ভাষা আপাতত
নিশ্চুপ, রাফি দিয়াকে দেখছে শুধু. আজ তাদের মাঝে একটু
কিছু হতে চলেছে,
এতে তারা হাসতে
ও পারে আবার
হাসি আড়াল ও হতে পারে. তাদের
বন্ধুত্ব এই তিন মাসের হবে, এর মাঝেই দিয়াকে ভালবেসে ফেলে রাফি. আর দিয়ার ব্যাপার টা রাফির অজানা. তাই আজ জানতে এবং জানাতে এখানে আসা..
দিয়া, ভাল লাগে
সবাই কে, এর মানে সেটা পছন্দ.
আর যখন ভালবাসা কারো জন্য হয়ে যায় তখন সেটা
তাকে জানিয়ে দিতে
হয়. আমার সব অনুভূতি তোমাকে নিয়েই.
তোমাকে ভাবতে আমার
খুব ই ভাললাগে. আমি তোমাকে চাই...
দেখো রাফি, জীবনে
কাউকে পেতে হলে আগে তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, আমি আমার মা বাবা
কে কথা দিয়েছি আমি কখনো ভালবাসায় জড়াবো না. তারা
যেখানে বিয়ে দিবে
আমি সেখানেই রাজি.
আর আমরা ভালো
বন্ধু. তবে তুমি
যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মাকে প্রস্তাব দাও তাতে আমার
অসুবিধা নেই... আসি,
আগে নিজেকে গড়তে
শিখো... দরজায় অপেক্ষায়.. কেউ খুলছেনা, বিরক্ত লাগছে.
একটু পর খুলে
দিলো দোলা. দোলা
রাফির চাচার মেয়ে,
এই বাড়ি দোলাদের ই. দোলা বেশির
ভাগ সময় ওর বোন এনির সাথেই
থাকে,আড্ডা দেয়.
ওরা তিন তালায়
আর দোলারা দোতালায় থাকে... সম্পর্ক টা দোলার
সাথে টম এন্ড
জেরীর মতো. ঝগড়া
মারামারি নালিশ সব তাদের সাথে বৃদ্ধমান.. দরজা খুলতে এতক্ষন লাখে?
ভিতরে বসে কি ডিম পাড়িস? ওরে আমার বাহাদুর রে, উনার জন্য দরজা
খোলার দায়িত্ব নিয়ে
বসে আছি তো! তুই বাহিরেই থাক,
ভিতরে তোকে আসতে
হবেনা. এই বলেই
দোলা এনির রুমে
চলে গেল... রাফি
ভাবছে, মেয়ে মানুষ
বুঝতে পারা এতো কঠিন কেন? খুব খারাপ লাগছে, শর্ত
দিয়ে ভালবাসা হয়? প্রতিষ্ঠিত? মামুর হাতে
মোয়া তো চাইলেই হয়ে যাবে. অসহ্য...
কি করছো বাবু
সাহেব? দোলার কথায়
বাস্তবে ফিরে এলো রাফি. দেখছিস না কি করছি? -নারে
কিছুই তো দেখছিনা.. এতো তাড়াতাড়ি কানা হতে গেলি কেন? -তোর এখানেই আসাই ভুল হইছে.. যা ভাগ,আসতে বলছে কে তোকে? ঘুরতেই রাফির
চোখের পানি দেখে
ফেলে দোলা. তাই সে পাশে এসে বসে. এই রাফি
তোর কি হয়েছে?
আমাকে বল প্লিজ!
কিছু না, তুই যা তো... আমি কিন্তু আন্টি কে বলে দিবে তুই কাঁদছিস! এই না না আম্মুকে বলিস
না. তাহলে বল কি হয়েছে? কি আর হবে,ঐ যে দিয়া... তারপর
সব কিছু দোলাকে বলল রাফি.. অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র
রাফি, এই মুহর্তে তার পড়ালেখা ই সঙ্গী, চাকরী কি এতো সহজ যে চাইলাম পেয়ে গেলাম..?
দোলা রাফিকে বলল,
অনার্স শেষ কর আগে, তারপর মাস্টার্স... এর পর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবি নিজেই... আর তুই দিয়াকে বল তিন বছর অপেক্ষা করতে... তিন বছর পর... দিয়া রাফি মুখোমুখি.. নীল শাড়িতে আমাকে কেমন লাগেছে রাফি? -খুব সুন্দর দিয়া.. তো বাবা মায়ের কাছে কখন যাবে তুমি? -কার?
কেন আমার! -কেন যাবো? আমাদের বিয়ের
কথা বলতে! -এখন প্রতিষ্ঠিত আমি তাই বিয়ে করতে চাও?
-কিন্তু দিয়া আমি যে এই প্রতিষ্ঠিত হয়েছি তা শুনবেনা? কেমন করে আমার
দিন গুলো কেটেছে তা শুনবেনা? আমি ই বলি তুমি
শুনো... (১) ২৫ শে মার্চ ২০১২
সকাল দশটা.. বাবার
অবস্হা খুব খারাপ,
উনাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম... তখন তোমাকে ফোন দিলাম, তুমি
তখন কি বলেছিলে মনে আছে? আমি বলছি. তুমি বলছিলে তোমার বান্ধবীর বিয়ে তাই সেখানে গিয়েছ..
এই বলেই ফোন রেখে দিলে... আর দোলা,, ও আমার চাচাতো বোন. ও তখন ভার্সিটিতে আমি ফোন দিলাম, ও ফোন ধরে বললো,
আমি আসছি রক্ত
নিয়ে তুই চিন্তা করিস না... ২৬ শে মার্চ ২০১২
বিকেল পাচঁ টা...
তোমাকে ফোন দিলাম.
তুমি বলেছিলে এতো ফোন করছো কেন?
অথচ তখন আমি কাঁদছিলাম. কারন, দোলা
আগের দিন থেকে
পরের দিন পর্যন্ত বাবার পাশে ছিল.
সারারাত ও ঘুমায়নি, আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল. কিন্তু বাবা তো, উনাকে আর দোলা
কে একা রেখে
যেতে পারিনি. তাই বারান্দায় ছিলাম... আর দোলা কে দেখেছি কষ্ট করে জেগে
থাকতে... অথচ এই কষ্টের অংশ টা তোমাকে শেয়ার করার
কথা ছিল.. ১০ জানুয়ারী ২০১৪ তোমাকে বলেছিলাম আজ আমার
ইন্টারভিউ, আমার খুব ভয় করছিল. তুমি
বলেছিলে এটা ভয়ের
কি? এতো দিন কি পড়ছো? যোগ্যতা ছাড়া গিয়ে কি করবে? আর দোলার
সেদিন দেখতে আসার
কথা ছিল. আমার
সাথে ও গিয়েছিল, আর বলেছিল তুই যেমন নরমাল এমন ওখানেই থাকবি.. চাকরী
পাওয়ার পর আমি দোলাকে প্রথমে না বলে তোমাকে বলেছিলাম. তুমি খুব খুশি
হয়েছিলে, তোমার স্বপ্নের কথা তুমি সব ই বলেছ. সেদিন
ই তুমি আমাকে
ভালবাস একথা বলেছ..
অথচ আমি বাসায়
গিয়ে প্রথম মাকে
বলেছিলাম, মা খুব খুশি হয়েছে. আর আমার রুমে গিয়ে
দেখি দোলা. ওকে বলতেই ও কেঁদে
দিলো. আর ও বর পক্ষ কে না করে দিয়েছে. ওকে যে দেখতে
এসেছিল তাকে একা ডেকে বলেছিল ও একজন কে খুব ভালবাসে. একদিন আমি খুব কাঁদছিলাম তোমাকে ভেবে. ও সেটা
দেখে ফেলে. আমার
পাশে এসে বলে,
কাকে ভেবে কাঁদিস? কেন চোখের পানি
নষ্ট করিস? যে তোকে ভেবে কাঁদে
তার জন্য একটু
কাঁদ তাও শান্তি পাবি... আজ যখন আমি আসতেছি তোমার
কাছে, ও আমাকে
বললো এই গান টা একটু শুনে
যা একটু,, "তোমায় ভালবাসি একথা আজ ও হয়নি বলা,
তাই তোমার সাথে
আমার হবেনা পথ চলা. তোমাকে ভালবাসি বুঝে নিও একবার,
হারিয়ে গেলে তা খুঁজে পাবেনা চেষ্টা করে বার বার."
গান শুনে আমি ওর চোখে তাকালাম, দেখলাম ওর চোখ থেকে এক ফোটা
দু ফোটা করে পানি পড়ছে.. দেখো
দিয়া, ভালবাসা মানে
দূরে থাকা না, পাশাপাশি থেকে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করা.. এক সাথে পথ চলা.
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নাম ভালবাসা না. এই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাঝের
কষ্টের সাথে কাঁদা,
আর সুখে হাসা
ই ভালবাসা.. তাই আজ আমি স্বার্থপর হতে পারবোনা. দোলার
চোখের অশ্রু সব পড়ে যাওয়ার আগেই
তা কমাতে হবে.
ভালো থেকো... আবার
দরজা খোলার অপেক্ষায়... দোলা না আজ, এনি খুলে দিয়েছে. ও কোথায় রে? আমার
রুমে ভাইয়া. এনি তুই আমার রুমে
যা আমি তোর রুমে গেলাম. দোলা,
তোর চোখের সব পানি কি শেষ?
কিছু অবশিষ্ট রাখ পরে লাগবে. জানো
দোলা, আমার জন্য
যে কাঁদে আমি ও তার জন্য
কাঁদি. দোলা তাকিয়ে দেখে রাফিও কাঁদছে. দোলা রাফিকে জড়িয়ে
ধরে, আমি আর কাঁদতে পারবোনা রাফি.
আমি তোমাকে.. ভালবাসী রাফি বলে দিল...
এটাই ভালবাসার বন্ধন.. কান্না হাসির মিলন...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন