অনুকাব্য-রাশেদুল হাসানের অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ



অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৪


কি আজিব রঙ্গরে ভাই,
এক বস্তা নামাবি বলে
দুটোই তুলে দিলি।

অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৫


মসকারি কর ভালো কথা
তাই বলে তুই দেশ শুদ্ধ
মুতিয়ে ভাসাই দিবি?

(কাদের মোল্লার রায় শোনার পর)

অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৬


হাতে নেই মরনাস্ত্র।
               তাতে কি?
               আছে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত,
              স্লোগান মুখর কন্ঠস্বর,
              আছে অঙ্গার ভরা চোখ।
নেই সহিংসতার হুঙ্কার।
              তাতে কি?
              অটল পর্বত মনে,
             পারবে কি বাধা দিতে?  

অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৭


অসংখ্য ভীড়ে হারিয়েছি আমি বহুদিন
হারিয়ে খুজেছি আমার আমিকে
পেয়েছি আমাকে
                   কখনও অবাঞ্ছিত,
                   কখনও নগন্য,
                   কখনও ভীড় বাড়ানোর যন্ত্র রুপে।
কিন্তু আজ নিজেকে পেয়েছি,
পর্বত সম দৃঢ়তায়, অটল অবিচল,
ভাটার টানের সংহারি রুপে।  (৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, প্রজন্ম চত্বর, )

অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৮


পতাকা হয়েছে কাফন
রাজপথ আজ কফিন
রক্ত দিয়ে, মুছে দেই চল
আবর্জনা যত।

(থাবা বাবার মৃত্যুর পর)

অসমাপ্ত ভাবনা গুচ্ছ-১৯



পকেট ভর্তি মৃত্যু হুমকি
থোড়াই কেয়ার করি
এখনো বুঝনি
এখনো জাননি
বাঘের মুখে হাত দিয়ে আমি
সহজেই পাশা খেলি

(হুমকি ধমকির ফোন আসার পর)

                 
                              ---------রাশেদুল হাসান

কবিতা-কানিজ ফাতেমা খুশী


তুমি

-কানিজ ফাতেমা খুশী


নীলাভ নীলের,
  অঢেল সমারোহ
আকাশের চতুরাংশে।

ধু ধু প্রান্তর,
আকাশের ছায়াতলে
   তুমি একা,
নির্ঝরিণীর পাশে,
 নিশ্চল রয়েছো দাঁড়িয়ে
  অপলক চেয়ে।

  বিস্ময় তোমার চোখে মুখে,
     বলি,
  ভাবছো কি তুমি?
 কি চাও তুমি জানতে,
   সুশোভিত সবুজের কাছে,
     উদার আকাশ ?
      অসীম নীলিমা ?
        না,
  হিজল তমালের ছায়া সুন্দর,
  নরম মোলায়োম কচি ঘাসের
     সবুজ পাতানো বিছানা ?
          নাকি,
   তোমার মনের গহীন কোণে
    লুকানো সেই দুটি দেহের
       অভিন্ন হৃদয়টিকে ?
           না,
        আনমনে শুধু,
     সাজিয়েই রাখো আমায়
      তরুলতা আর ফুলে ?
       না, আমি জানি,
     তুমি রাখো আমাকে,
        আমার নামকে
       আমার স্মৃতিকে,
   দিবা-রাত্রি বুকে তুলে।
       আর,
      সাজিয়ে যাও ধরণী
      তরুলতা ও ফুলে।
      
  বলো, বিপ্লব ছাড়া
    কভু কি
    মুক্তি আসে,
     না আসবে?

কবিতা-এ.বি.এম সোহেল রশিদের ২টি কবিতা


মৃত্যুর ফাঁদে ভবিষ্যৎ

এ.বি.এম সোহেল রশিদ

.............................................. চাঁদের রূপোলী বৃষ্টিতে দেখেছি আঁধারের বিমূর্ত রূপ! 
বিছানায় নামে নির্লজ্জ ঝড়! আত্মার শরীরে মুক্তি 
আলোয় বন্দী অস্থির রাত! শুভারম্ভ নতুন সকাল।
স্বপ্নমাখা ঘুম! চাঁদের গালে দেয় চুম! নির্বিকার আঁখি!
নির্ঘুম পাপড়িতে স্বপ্নদের ভীর! এলোমেলো ভাবনার বাগান!
সঙ্গীর প্রতীক্ষায়ব্যস্তদিন’!সম্ভাবনার কাছে পরাভূতঅস্থির 
এক বুক তৃষ্ণা, বাড়ায় ক্ষুধা! অতৃপ্ত আত্মা বেসামাল 
দহন! আগুনে আগুনে সন্ধি! সুখের করতলে আত্মা বন্দী
সংকটের রাজ্যে হাহাকার!বিরহ আর ভালবাসা একাকার!
নির্মাণাধীন ভালবাসার বেসামাল চিৎকার!ভেঙ্গেছে অহংকার
হদয়ে আড়াআড়ি কাঁটাতারের বেড়া!রৌদ্রে মাখামাখি বিষবৃক্ষ
ঝরাপাতায় তাম্র প্রলেপ!বিচ্ছেদের আলাপন!বাতাসে অশ্রু ঝড়
সীমান্তে সাক্ষীর তিরস্কার!বায়বীয় ভালবাসায় জীবন পারাপার 
শিকড়ের খুঁজে বৃক্ষ উৎপাটন!আবেগের পলিতে বীজ বপন
বর্তমানের হাতে প্রতারিত অতীত!মৃত্যুর ফাঁদে ভবিষ্যৎ 
উদ্দীপক উষ্ণ নিঃশ্বাসের বিরতিহীন উচ্ছ্বাসে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ 
অপেক্ষায় থাকে একটি মাত্র রাত! প্রতিদানের পাত্র হাতে
পরাজিত বাসনার হবে এবার অঙ্কুরোদগম!সমর্পিত দেহ!
জেগে উঠুক প্রাণ!বিজ্ঞাপিত ঠিকানায় আর নয় বসবাস 
নক্ষত্রের মাঝে বিশ্বাসের স্থায়ী নিবাস!দীর্ঘশ্বাস হয়ে যাব!



রক্ত ঋণ পরিশোধে উদগ্রীব মিছিল

এ.বি.এম সোহেল রশিদ

..............................................
স্বেচ্ছাতন্ত্রে অবগুণ্ঠিত ছিল যত ঘৃণিত কুট-কুশীলব 
তারুণ্যর হেঁচকা টানে নগ্ন এখন তাদের স্বরূপ 
দ্রোহের একেকটি মুষ্টিবদ্ধ হাত লক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র সমান!
ঐক্যবদ্ধ জনতার রণ দামামায় প্রকম্পিত জমিন
স্বাধীনতার প্রশ্নে রক্তের ভিতর প্রতিশোধের উল্লাস
মুহূর্তেই বিধ্বস্ত সগোত্রীয় বিশ্বাসঘাতকের মিথ্যে প্রাচীর 
অগ্রসরমান তারুণ্য! অপ্রতিরোধ্য ভাঙ্গনের স্লোগান
রক্ত ঋণপরিশোধে উদগ্রীব মিছিল! বিস্ময়ে তাকিয়ে স্বদেশ!
মায়ের আঁচলে সাজাতে ফুল, এখনও একুশের রাত নিদ্রাহীন 
দুহাত ভরা পুষ্পাঞ্জলিতে রঙ্গিন স্মৃতিসৌধের উঠোন
প্রকৃতির অঞ্জলি! পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ায় রক্ত আগুন 
ভাষার রক্ত! স্বাধীনতার রক্ত! শহীদের রক্ত! 
ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর তিন লক্ষ মা-বোনের ক্ষোভর দহন
বুকে এখনও নিক্বণের মত বাজে শহিদের আত্মার পদধ্বনি 
চাই বিশ্বাসের সাথে ঘাতকের সংঘাত!চাই চেতনার পরিস্ফুটন!
বিচলিত হইও না পথ যাত্রী! ওরা জেনে গেছে
সময় এখন যৌবনের!পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া ছড়িয়ে দেয়ার 
সময় এখন দ্রোহের!বিশ্বাসঘাতকদের ক্রোধে পুড়িয়ে মারার 
সময় এখন প্রতিশোধের! মা-বোনের ধর্ষকদের ঝুলিয়ে দেয়ার 
সময় এখন স্লোগানের! মিছিলের সুনামিতে জঞ্জাল ভাসিয়ে দেয়ার
আঁতাতে নয়! আশ্বাসে নয়! ক্ষমতার ইঁদুর দৌড়ে নয়! 
দেখা হবে মুক্ত বর্ণমালার স্বদেশে! দেখা হবে বিজয়ে আবার!

কবিতা-তুলি চৌধুরী


অব্যক্ত গোপন কথা

তুলি চৌধুরী

লাটিমের মতো ঘুরন্ত পৃথিবীতে
মেপে দেখা হয়নি পাড়ি দেয়া পথের দুরত্ত্ব ।।
হিসেব হয়নি সূর্যের আলোয় চুমু খাওয়া ,
সময়ের সাথে বয়ে যাওয়া বছরের সংখ্যাও ।।
দীর্ঘ এই বায়বীয় পথ চলতে
দেখা মিলেছে অনেক কিছুর,
কুড়িয়েছি আনন্দ , বেদনার ঝিনুক মুক্ত রাশি ।।
অতিতের উস্কানি সময়ের ভাবনাগুলো
স্মৃতির গায়ের কাপড় খুলতে মহা ব্যস্ত ।।
কখনো দেখা হয়নি ভালবাসার চেহারা ,
বিষাদের ছায়াকে সঙ্গী করে ,
বেদনার নীল রঙ গায়ে জড়িয়ে
অন্ধকার রাতের ঘরে হাতড়ে খুঁজে ফিরি
ভালবাসার চেহারার সন্ধান ।।
প্রিয় দুর্বলতাকে যত্ন করে লুকিয়ে রেখে
শূন্য হৃদয়ে প্রশ্ন তুলি- থাক না পড়ে যেমনটি আছে ,
কি আর হবে উন্মুক্ত করে
জীবনের অব্যক্ত গোপন কথা ।।
জোড়াতালির জীবন যেমন যাচ্ছে যাক না,
যেমন বয়ে চলে সময়ের স্রোত ।।