কবিতা-সুমন্ত গোস্বামী

মিথ্যে প্রেমিক

সুমন্ত গোস্বামী


আবার মেঘে রঙ মেখেছে, বলতে গিয়ে চুপ
আমি আকাশ ধুয়ে নতুন করে, লিখব তোর রূপ
মিথ্যে কথাই যত্নে সাজাই, মিথ্যে দিয়ে সব
কথার পিঠে মিথ্যে বোঝা, মিথ্যে অবয়ব
বলা না বলা হাজার শব্দ, শরীর ধারন করে
সামনে আসে, দাঁড়ায় বসে, মিথ্যে হাসি হাসে
অনেক রকম ভালো-মন্দ, মিথ্যে কথার স্রোত,
মিথ্যে প্রেমে সত্যি গালি, মিথ্যে অভিযোগ
পাঁচ-সাত জনম ধরে, খুঁজে চলেছি যাকে,
শুনতে পেয়ে অবাক হবি, সে তুই নোস
এক অরূপ রতন হারিয়ে গেছে, খুঁজতে যাবি মিছে
অবাক রাতে কষ্ট পাবি, নষ্ট হবার ভয়।।

কবিতা-রুহুল আমিন ভূইয়া

চরিত্র

রুহুল আমিন ভূইয়া 


তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।

তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।

যদি তুমি অপদার্থ হও
 তুমি পিছু ফিরবে
 আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।।

কবিতা-শাব্বীর আহমাদ

"তুতেনখামেনের বিশ্ব-রেকর্ড "

শাব্বীর আহমাদ


তুতেনখামেনের কষ্ট অনেক
 দলা দলা কষ্ট বমির মত পেট
চিড়ে বেরিয়ে আসতে চায়,

কখনও পায়ুপথে কখনও নাভি দিয়েও হর হর করে নেমে আসে

 মুখ দিয়ে সুশীল উপায়ে বমি বের হওয়ার দিন নেই আর
 এখন বমি বের হয় হুট করে, না বলেই কোন রূপ সংকেত ব্যাতিরেকেই

রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রামে, স্টেডিয়ামে সর্বত্রই হুটহাট করে বমির ফোয়ারা

 সেদিন বাসে উঠে হঠাৎ হর হর করে এক বেচারার আপাদমস্তক ভিজিয়ে দিয়েছিলো সে,

আবার এক রেকর্ড খেলাতে নাম লেখাতে গিয়ে হুট
 করে এমন ধারায়া বমি বের হচ্ছিল যে,
 নির্বাক চোখে জাতীয় পতাকাটি দেখছিল
 কিভাবে তার দেহ গ্রাস
 করে নিচ্ছে তুতেনখামেনের বমি

 হলুদ, লালা মিশ্রিত করুণার মতো এক দলা বমি
 খুবই সাধারণ চাল ডালের প্রাচুর্য হীন নেহায়েত
 দরিদ্র একদলা বমি

আবার সেই দিন কৌতুহল বশত প্রেসক্লাবে
এক বিখ্যাত জননেতার কথা শুনছিলো সে,
হুট করে বেয়াড়া বমি এমন ভাবে বের হওয়া শুরু করল যে
তৃতীয় সাড়ির শেষ চেয়ার থেকেও ঠিক ঠিক
নেতা সাহেবের মুখ ভাসিয়ে দিচ্ছিল তার বমি

 তেঁতো স্বাদের তরল বমি
"নট সো ওরস্ট টেস্ট আফটার অল স্লাইট টক লাইক বিয়ার "-
 ঠোঁটের বাম কোণাটা খানিকটা চেটে আনমনে বলে উঠেন নেতা
কাল রাতের কথা মনে হতেই ধীর লয়ে শরীরটা এলিয়ে দেয় সে

 জ্বিহবাটা ক্রমশ চেটে যাচ্ছে
দর্শকরা বিমোহিত,
মহান নেতার শৈল্পিক কর্মে তারা বিমূঢ়

 করতালিতে মুখর কনফারেন্স রুম,
দু একটা কুপমুন্ডক দৃশ্যটা সহ্য
করতে না পেরে মেঝেতে বসে হরহর করে বমি করে দেয়
তাতে অবশ্য কারো দৃষ্টিপাত হয়না, সবাই মুগ্ধ নেতার শৈল্পিক লেহনে

ক্ষীণ পায়ে দৌড়াচ্ছে তুতেন খামেন-
বমি হরহর করে হয়েই যাচ্ছে ক্রমশ বিপন্ন বোধ করে সে
এমন ভাবে বমি হলে তো আবার ক্ষুধা লাগবে

আঁৎকে উঠে সে, তার মাথা গুলিয়ে উঠে

ক্ষুধা ক্ষুধা ক্ষুধা
বমিটা পেটে থাকলেও তো কিছুটা শান্তি
এতো দূর থেকেও সব বমি বেচারা নেতার মুখেই লাগছে
কি করবে কিছু ভেবে পায়না তুতেনখামেন

হঠাৎ বলে উঠে,"বাইনচোদ, বমি টাও প্যাট থেকেও কেড়ে নিলো

" দৌড়াচ্ছে বিপন্ন তুতেনখামেন
পেছনে তাকিয়ে দেখে জীর্ণ পতাকাও দৌড়াচ্ছে
"মাথা বোধহয় নষ্টই হয়ে গেলো বমির অভাবে-
 ভাবে তুতেনখামেন

 শাহবাগ মোড় আসতেই দেখে জটলা,
 সবাই তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, বিশাল হলোগ্রাফিক
 স্কীনে মহান নেতা বিড়বিড় করছে,
 ক্রমাগত তার জ্বিহবাটা চেটে যাচ্ছে

 "জ্বিহবাটা বড় হয়েছে বেশ খানিকটা" –
 ভাবে তুতেনখামেন
পতাকাটাও এসে থামে পাশে, বেশ ক্লান্ত
 পর্দার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ

 হঠাৎ করে পতাকাও শুরু করে বমি
 হরহর করে দমকে দমকে সারা পতাকা থেকে প্রতিটি সুতার
 কণা থেকে বেরিয়ে আসে দগদগে বমি
 অবাক হয়ে দেখে তুতেনখামেন

 ধীরপায়ে পতাকাকে সাথে করে টিএসসির
মোড়ে বসে পরে তুতেনখামেন

 বমি করেই যাচ্ছে তারা, ক্রমশ বাড়ে জটলা,
 সবার নজর এখন তুতেনখামেন আর জাতীয় পতাকার দিকে

কিছুক্ষণ বাদেই মিডিয়ার গাড়িতে ভরে যায়
 চারদিক- "লাইভ টেলিকাস্ট ফ্রম টিএসসি

" আশে পাশে শুনতে পায় গিনেজবুক কর্তৃপক্ষ থেকেও নাকি লোক এসে যাবে !

দর্শকরা ভীষন চেঁচাচ্ছে,
কতোরকম উৎসাহ ব্যাঞ্জক ধ্বনি
 বিষন্ন চোখে দেখে তুতেনখামেন

দু একটা টেলিকম কম্পানি এরই মধ্যে বিলবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে
 তারা এই মহান রেকর্ড গড়ার স্পন্সর
 বমির বেগ বেড়ে যায় তুতেনখামেনের
 পতাকাটা শুয়ে পড়েছে ফোঁপাচ্ছে ,
 হেঁচকি দিচ্ছে
আর বলকে বলকে
বমি বেরুচ্ছে

ক্লান্ত দেহে তুতেনখামেনও শুয়ে পড়ে
চারপাশে নানা চিৎকার-শিৎকার

 "বমি শেষ হয়ে গেলেই আবার
 ক্ষুধা লাগবে নিশ্চয়ই"-
ঘোলাটে চোখে ভাবে তুতেনখামেন

 "শালার বমিরও পেটে থাকার অধিকার নাই"-
 বলে চোখ বুজে ক্লান্ত তুতেনখামেন