বেঁচে থাকা কিংবা
শাব্বীর আহমাদ
এ কেমন বেঁচে থাকা
খোদার প্রতি তীব্র অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকা,
নিজের প্রতি তীব্র অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকা,
অথবা বেঁচে থাকার অভিনয় !
আত্মার ভেতর আত্মা জেগে উঠে
সত্তার ভেতর সত্তা
শরীরের ভেতর শরীর
আর্তনাদের ভেতর আর্তনাদ
মিথ্যার সাথে বিপথগামী সত্যের সঙ্গম
আমাদের ক্রমাগত ভ্রান্তির সাথে তলিয়ে যাওয়া
কিংবা ভেসে উঠা
কেননা এখন তো সমুদ্রের ভেতরও সমুদ্র !
এ এক অনন্তকালীন লুপ
যার ভেতর নিত্য পাক খেতে থাকা
আর নিজের প্রতি অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে থাকা
অথবা তাকানোর চেষ্টা করা
কেননা এখন চোখের ভেতরও চোখ !
আমি কিভাবে তোমার কিংবা তোমাদের দিকে তাকাই বল
যখন নিজের অস্তিত্ব নিয়েই ঘুরপাকে মত্ত।
পৃথিবী এখন ঘোরমগ্ন
চারপাশে দেখ পৃথিবীর খুঁটি ধরে কে ঝাঁকায়
বেঁচার পৃথিবীই এখন অস্তিত্ব সংকটে !
আমি আর কোন ছার !
তোমার আমার ভালবাসা জমিয়ে রাখ
তবে অন্য পৃথিবীর জন্য ।
এ পৃথিবী আমার নয়
এখানে বেশ্যার কাতরানিতে কেও কাতর নয়
যতটা কাতর সবাই বেগমের হাঁচিতে হয় ।
এখানে গণিকার চোখের সাথে
রাজকুমারীর চোখের নীলে বড় তফাত
এখানে অধিকার রঙধনুময় !
এ পৃথিবী আমার নয়, তোমার ভালবাসা
জমিয়ে রাখ
নিজেকে কেবল একটিবার দেখে তারপর দেখো,
বাকি জীবন তোমাকে দেখেই কাটিয়ে দিব।
অতঃপর, চিরচেনা লুপে আশার সাথে সহবাস।
ভূল ছন্দে ক্যালকুলাসের ফাঁকে
শাব্বীর আহমাদ
প্রিয়তমেষু , যদি একটিবার তাকাও ফিরে
ঐ উদাসী ভ্রুখানি কুঞ্চিত করে
ভিসুভিয়াসকে শান্ত
করে দিতে পারি নিমিষে ,
তোমার ছবি এঁকে এঁকে উঠে যেতে পারি
সুউচ্চ ঐ আন্দিজের শিখরে ।
প্রিয়তমেষু ,যদি একটিবার
তোমার মেঘগুচ্ছকে সরিয়ে এনে রাখ
বাম কাঁধের পাশে ,
আমি পৃথিবীর সমগ্র মহাসাগর ছেঁচে জল
এনে ঝরাব তোমার ঐ উষ্ণ অধরে ।
প্রিয়তমেষু , যদি একটিবার
তোমার পবিত্র চোখের ইশারা দিয়ে ডাক
আমায় ঈষৎ প্রশ্রয়ে ,
সাত তবক আসমান আর সাত তবক জমিন
উলট পালট করে
ছুটে আসব আমি
ভোরের কোমল রশ্মিপাতে ।
একদিন ভোরবেলায়
শাব্বীর আহমাদ
আমি শুদ্ধ হতে চেয়েছিলাম এই শাশ্বত সকালে ,
একদল স্বচ্ছ বাতাসের আলোড়ন চেয়েছিলাম
আমার চিরকালীন ঘোলাটে মগজে ।
কিন্তু যখনই শ্বাস নিতে গিয়েছি,
বারবার নত হয়েছি
অক্সিজেনের বদলে সালফার-কার্বনের
উন্মত্ত উচ্ছাসে ,
থিকথিকে ভীষণ পঙ্কিলতা গুলো জড়িয়ে
আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে
কেবলি সরিয়ে দিয়েছে
তিমির থেকে তিমিরে
অনন্ত গহীনে ।
শুদ্ধ হওয়ার দূরাচারী স্বপ্ন দেখে দেখেই
হয়তো
একদিন আমি ডুবে যাব
তোমাদের চিরকালীন এই নগরে
অসীম গহবরে ।
এথেনা, নির্বাসনে যাও
শাব্বীর আহমাদ
চলে যাচ্ছে দিন, কোথায় তুমি সুদিন
জীর্ণ পাঁজড়, অলিন্দ জুড়ে হাওয়া বয়
বিবর্ণ পাতা,চর্বিত হওয়ার আকাঙ্খায় রয়।
তবু উল্কাপতন কদাচিৎ
জমাট শোণিত সচকিত
তারপর আবার অর্ফিয়ুসের সুর
মহাজাগতিক নিস্তব্ধতায় বিশ্বজগত চুর
গোটা পৃথিবীই যেন পাঁড়মাতাল এক বেশ্যালয়,
সহস্র কঙ্কনধ্বনি, হুল্লোড়-চেঁচামেচির মাঝেও ঘুমন্ত আলয়,
সদর-অন্দর সবই খোলা,সিঁধকাটা বৃথা
অন্দরমহলে লেগেছে মড়ক
ক্রমাগত অস্তিত্ব ক্ষয়
তবু কিছু দিকহীন কবি এখনও জাগ্রত
সোডিয়াম বাতির নিচে করছে
মৃতদের সৎকার
হঠাৎ আকাশচেরা বজ্রে দূরীভূত আঁধার
মহাজাগতিক কন্ঠে অমোঘ এলান
" এবার তোরা শিল্প ভাঙ
"।