কবিতা-সালেম সুলেরীর ২টি কবিতা

ইলিশিত

সালেম সুলেরী


বাংলার সাথে মিশে আছে কিছু ঐতিহাসিক পাখি
তারাও বাঙালি, ধুরীণ প্রজাতি, হয়তো বা কেউ গাছ,
হয়তো বা কেউ স্বাদ-উপভোগে নাম নিয়ে আছে মাছ
হয়তো বা নদী পদ্মা-মেঘনা, জীবে-জলে মাখামাখি।

বাংলার আছে ভাষা সহযোগ: অহম উড়িয়া বোড়ো,
নাগাদের পাশে নাগরী সিলটী, পাহাড়ী বা আরাকান,
আছে ভাটিয়ালি, রবি-নজরুল, লালনে-হাছনে গান
আছে খুঁটি সব পতাকা ওড়ানো, মাটি খোঁড়া দিন, খোঁড়ো-

বাংলার আছে প্রত্নতত্ত্ব, উয়ারী- বটেশ্বর
পৃথিবীর সব দেশে দেশে আজ বাঙালির প্রবসন,
তন্মনস্ফ কবি কারুকার, নটসেবা; প্রহসন
মাছে-ভাতে দ্রব বাঙালির শ্লোক- ঘটনা ঘটেশ্বর...
বোশেখ অথবা টানা বর্ষায় রূপের ইলিশ, প্রীত
পান্তা-প্রসাদ, স্বাদ-আহলাদ, বাঙালিতো ইলিশিত!




আজন্ম কবিতা রাশি

সালেম সুলেরী


পঞ্চাশ পেরুনো জন্মদিনে,
বাবা-মা হয়তো বুঝলেন-
আমি কোনো সন্তান জন্মিনি।
আমার মানবভ্রণ ছিলো এক প্রহসন?
বাবা-মা হয়তো হিসেবের টালিখাতা খুলে
সেই জায়মান শিশুর কান্নাকে আজ আর
      স্বাভাবিক মসাদরে দেখতে নারাজ।
দেখলেও অবাক হন, কী করে এই সন্তানের ছায়া
নাভী ছিঁড়ে দখলে রাখলো কোল,
বোঁটায় রাখলো প্রাত্যহিক ঠোঁট, স্নেহের দুলুনি
আঁচলের পাড়গুলো ইঁদুর চিকন দাঁতে
      চাটতে চাটতে
      ঘুম পাড়ানির স্বপুপদ্য কাটতে কাটতে
      আমের কলম চারা ঘাটতে ঘাটতে
      হাফপ্যান্ট ফুলপ্যান্ট- হাঁটতে হাঁটতে...
বয়েসের চিঠিখামে আঠা-গাম সাঁটতে সাঁটতে
পঞ্চাশ পেরুনো জন্মদিনে
   প্রত্যন্ত বাবা-মা দেখলেন
   একটি পাগল চিঠি
         একটি পরাবাস্তব চিঠি
         একটি পোস্টমডার্ণ চিঠি
পাঁচ ফুটের চেয়েও সৌম্য একটি দিঘল খামে
হাসছে একটি বাহুরঙ কবিতা-কলম,
স্বয়ংক্রিয় ফলায় লিখছে এপিটাফ-
       আমাকে মার্জনা কোরো সকল বাবা-মা
       আমি এক নিজস্ব অনৈক্য আত্মা
       ফুটিনি মানুষ তবে অমানুষ রঙেও ডুবিনি।
ধন্য আমি এই শীতাতপ কলমজন্মের জন্যে,
ধন্যবাদ মাতৃক্রোড়, পয়মান্ত পিতৃ-পরিচর্যা
    পেশার শাসক, জীবিকা নগর, পাশফেরা পরিবার
ঐন্দ্রজালিকের কতো মঞ্চ, কতো জাদুর খসড়া শেষে
    দেখো এইবার চূড়ান্ত চমক-
    সকল আনন্দ-ব্যথা সারিবদ্ব মিছিল সাজিয়ে
    হ্যামিলনের কাব্যবাদক আজ শেষযাত্রায় সামিল-
    জন্মকলমটিকেই বানিয়েছি বাঁশি,
  সুরে সুরে ডাকছে সাগর, স্রোতের সন্ন্যাসী।

  আমার জ্যোতিষ আমি, আজন্মা কবিতা রাশি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন