কবিতা-সিপাহী রেজা

প্রয়োজনের গপ্প

সিপাহী রেজা


প্রয়োজনে কাউকেই পাওয়া যায় না,
না পেন্সিল - না ইরেজার - না কাটার
প্রয়োজনে কেউই এলো না
না আমি - না তুমি - না সে
ঠিক আছে, দেখা হবে অযথাই...
চলতে ফিরতে হয়তোবা চা'য়ের দোকানে, কিংবা
বেমালুম ভুল করে কোনো এক লাশের ভাগাড়ে !

কবিতা-ওয়ালিনা ওভির ৩টি কবিতা

বায়স্কোপ

ওয়ালিনা ওভি


লং শট
একটা ল্যাম্পপোষ্ট, তার পাশে কুন্ডুলী পাঁকিয়ে ধোঁয়া উড়ছে,
একটু প্যান করতেই দেখা গেল মাঝারী গড়নের একটা মেয়ে
উগ্র প্রসাধনে আসল চেহারা ঢাকা পরে গেছে প্রায়, হাতে জ্বলন্ত
সিগারেটে থেকে থেমে থেমে শুষে নিচ্ছে গরম নিকোটিন
জাম্প শট
একটা হারজিরজিরে ছেলে, স্যাতস্যাতে একটা ঘরে জ্বরের ঘোরে
আবোল তাবোল বকছে
লং শট
একটা বাপের বয়েসী লোক হাঁটতে হাঁটতে এসে মেয়েটার সামনে
হঠাৎ থেমে গেল, সিগারেট ধরাল, মেয়েটার দিকে তাকাতেই, মেয়েটা
শরীর দুলিয়ে নিঃশব্দে হাসল। তারপর লোকটার পিছু পিছু একটা গলিতে
হারিয়ে গেল
ক্লোজ শট
গলির পাশ ঘেসে একটা দেয়াল, সেখানে রাজনীতি,
সামনে আসছে শুভ দিন, আপেল মার্কায় ভোট দিন
গলি থেকে মেয়েটা বেড়িয়ে এলো, হাতে খানা কাগজ,
যার এক পিঠে যমুনা সেতু, অন্য পিঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ,
লেখা আছে, চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে, অনেকটা
তার শরীরের মতন
জুম শট
মেয়েটা ভাবে সন্তানের কথা, শরীর কী ভীষণ গরম ছিল
যখন সে বেরুচ্ছিল, কিন্তু, সে জানে ওই কাগজের উত্তাপ
আরো অনেক বেশী
পরিশেষে,
এসব নাকি শুধু সিনেমায় হয়!



অভিসম্পাত, অভিশাপ

ওয়ালিনা ওভি


কথিত আছে, 'করিলে অভিসম্পাত ফিরে আসে নিজেরই কপালে '
অভিশাপ ! কেউ কাউকে দেয় কি ? এতো নিয়তির খেলা
কখনো আসে গড়িয়ে গড়িয়ে অশ্রু হয়ে, কখনো বা দীর্ঘশ্বাস হয়ে,
একেকটা হাহাকারের আত্মজীবনী কোনদিন প্রকাশিত হয় না
বিশ্বাসের গাঁথুনীতে থাকেনা জোড়, তবুও খুব সাবধানে বুকে নিয়ে
দাঁড়াও একদম নড়বে না, এখানে ঊনিশ-কুড়ি ত্রুটি চলে না
গলদে দেবে ধাক্কা, অবশেষে বিভ্রাটের চাপে পড়ে সময়ের মৃত্যু
এই যে অনাকাংক্ষিত মৃত্যু, দায়ী কে ? তুমি না নিয়তি ?
সময়ের চতুরকথন সাথে নিয়ে গেলো বিশ্বাস, অনুরাগ হারিয়ে গেল
বিবাদে, আর সব হাসি নিয়ে গেলো আঁধার
অবশেষে পূর্ণিমা হেরে গেলো ঘোর অমাবস্যার কাছে, তরল জোছনা
ঠোঁটে করে আর ছুঁইয়ে দেবে না কোন স্বপ্ন মানব
চুম্বনে বন্ধ চোখের পাতা হাতড়ে বেড়ায় ভাষা, চোখ স্বপ্ন দেখে না,
ভুলে গেছে
আঁধারের কাব্যে, আঁধারেরই ভাষা বোঝা, চিরতরে আঁধারের হয়ে থাকা
একঘোরে চাঁদ

পোড়া চাঁদ, সময়কে ফেরাতে পারোনি তাই ধিক্কার


স্বপ্ন টোকাই

ওয়ালিনা ওভি


রঙীন শব্দের পেছনের মানুষগুলো আসলে বর্ণহীন,
অপ্রাপ্তির আনাচে কানাচে খুঁজে ফেরে তৃপ্তির ছাঁচ
সব পেতে নেই, সব পেয়ে গেলে মরে যাবে স্বপ্ন,
গোটা জীবনের ওগুলোই তো রঙীন

উড়ুক্কু কিছু স্বপ্ন
আশার মোহে টেনে নেই নিরাশা,
জীবন খুঁজতে গিয়ে তুলে আনি চোরাবালি
নিমজ্জিত স্বপ্নে গড়ি দুঃরাশার বালিঘর,
সময়ের লুকোচুরিতে কেটে যায় অমানিশার ঘোর
চুপ দুপুরে সুখ কথার স্বপ্ন গুলো ভুলিয়ে রাখে ব্যর্থতা,
এপাশ-ওপাশ মধ্যরাতের ভোরের স্বপ্নের মতো

আমরা স্বপ্ন টোকাই

কবিতা-রাজীব চৌধুরীর ৩টি কবিতা

প্রবেশাধিকারঃ

নিখিল সমীকরণ- ড্রাফট নংঅজানা .....


নিজেকে খুঁজে ফেরা পাখির দল জানেনা কোথায় ছিল অজানা
নির্বোধ স্থর,
আমি সেখান থেকে নিজেকে খুঁজে ফিরেছি।
একদিন শুধু তোমার দেখা পাবো ভেবে আমি একাকী হেটেছি
নির্জলা জলাকার পথে প্রান্তরে।
আমার শিরা গুলো অস্থির ছিল বলে খুঁজে পাইনি কোন
বালুকনা- কিনবা আঠালো আস্তরণ,
এবং তারপর তুমি এলে জীবনে
আমি আন্দোলিত হলাম শুধু তোমার তোতলা উচ্চারনে
আমার শরীরের বিবমিষা শৃঙ্গার
আমার নিরামিষ চিহ্ন চেতনাকে ঘীরে গড়ে তুলে মহলা অট্টালিকা
আমি সেখানে লুকিয়ে রেখে নিশ্চিন্ত হতে পারিনি কোনভাবে
তাকিয়ে দেখি হৃদয়ের গহীনে তুমি- শুধু তুমি।
তোমাকে হারাব ভেবে আমি কেঁদেছিলাম রাত্রি দ্বিপ্রহরে
তোমাকে হারাব ভেবে আমি লুকোতে চেয়েছিলাম অলিন্দের প্রকোষ্টে
সেখানে শুধু রক্তের শ্রাব ধারা ছিল- এবং

রক্তের লাল বড় লালচে ছিল বলে
আমার বুকের বাম পাশে বয়ে যাওয়া শিরা গুলোকে সরিয়ে
আমি তোমাকে রেখেছিলাম সেখানে
তুমি তার চেয়েও অধিক রঙ্গিন হয়েছিলে সেকারনে
তোমাকে রাঙ্গাতে গিয়ে আমার হৃদপিন্ড বামপাশে সরে গিয়েছিল
এবং আমি হয়েছিলাম তোমার আরো বেশি আপন
সেই থেকে আমি এখন তোমাকে বহন করে চলেছি
জানি মৃত্যুও কেড়ে নিতে পারবেনা আমাকে
বুকের পাঁজর ভেদ করে হৃদপিণ্ড চিড়ে ফেল্লেও পাবেন কেউ
কারন আমি এখন তোমাকে লুকিয়েছি আরো গোপনে-
সেখানে আমার নিজের প্রবেশাধিকার নেই।




নিখিল আমি ভালবাসা


আমি তারপর খুঁজে ফিরে ছিলাম নিজেকে
নিখিল ড্রাফট এর কলমের খোঁচার মাঝে
আমার নিখিল সত্ত্বা
কেউ জানেনা সেখানে কি ছিল?
কে ছিল-
শুধু দেখেছিলাম আমার মাথার চারপাশে ছিল
একরাশ কামনার আগুন
দেহের মাঝে ছিল
লোভ- ঘৃণা- হতাশা
আমি সেখান থেকে পালাতে গিয়ে
নিজেকেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।

তারপর ছিলনা আমার কোন অন্ধকার অস্তিত্ব
শুধু আমি গুমড়ে কাঁদার সময় জেনেছিলাম
অন্ধকারের বেগে নিজেকে হারিয়েছিলাম আমি
আলোর কাছে পৌছানো আমার আদৌ সম্ভব ছিলনা কোন কালে

নিজের হাতের ভেতর রেখেছিলাম তোমার নরম হাতের ছোয়
এখন সেই হাতের ছোয়া খুঁজে ফিরি
পাইনা কিছুই
শুধু আমার কোলে লেগে থাকে তোমার সোনালী চুলের ছোয়া
আমি সেই ছোয়া তে আঁচল পাতি
আবার তুমি আসবে ভেবে নিজেকে সাজাতে শুরু করি
নতুন সাজে।

তারপর দেখি আমার জলছাপে তোমার চিহ্ন
ততদিনে বুড়িয়ে গিয়েছিলাম বলে
ভাল করে দেখিনি চোখে - ঠাহর করতে পারিনি তোমাকে
তুমি তো আগের মতই ছিলে
আমি শুধু তোমার কথা ভেবে ভেবে একাকী
শুধু একাকী আনমনে গুনেছিলাম আমার বয়স
তারপর আমি তোমাকে আবার কোলে নিয়ে আদরে আদরে
ভরিয়ে দিলাম আবার সেই তোমাকে।



প্রেম নাকি কামনা

কামনার ভেতর প্রেম খুঁজে ফেরা কবিতার পংক্তিমালা

নিখিল ড্রাফটঃ


বিষন্নতার যন্ত্রনায় মরে যাচ্ছে শকুন গুলো
আগুনের হলকার মাঝে খুঁজে পেতে চাইছে জীবনের খেরোগান
কান্নার জলের কাছে মিছে মনে হচ্ছে উদ্ভিন্ন জীবনপ্রনালী
কিশোরী স্বপ্নের মাঝে বেঁচে থাকা শুদ্ধস্নান
মরে যাওয়া পাখিগুলোর মরা চোখ স্থির
হারিয়ে যাওয়া অপভ্রংশের মত ভেসে যায় শুদ্ধতম প্রাণ।

আমি তারি মাঝে খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম প্রেমের অনল
তার চেয়ে মৃত্যু ছিল ঢের ভাল
মরন এলেই মরে যেতে হয় ভুলে নাই কাকড়ার দল
আমি সেই কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।

স্বপ্নের মাঝে খুঁজে ফেরা জীবনানন্দের বালিকার কেশ
মুক্তকেশ তিতিরের জলের মাঝে বয়ে যাওয়া হাওয়ার রেশ
পৃথিবীর কামনাগুলো জেঁকে বসেছে আমার চুলে
চোখের মাঝেই পড়েছিল সন্ধ্যা তারার মৃদুলেশ।

আমার এই কামনার নামই কি ছিল প্রেম
নাকি আমার দেহের চুল গুলো কামনার বাসনার মত কোনকিছু?
কেজানে এর কোণ কারন নেই জানি
এই সকাল সন্ধ্যা প্রশ্ন ছিল আমার মনে।।