কবিতা-আহমেদ তানভীর

ভালোবাসার অবাধ্য নীড়ে

আহমেদ তানভীর


একটা সময় ছিলো, যখন অবিরাম লিখে গেছি-
রূপকথার গল্পের মতো অজস্র স্বপ্নময় কবিতা
সারারাত জেগে জেগে তুমুল স্বপ্ন এঁকেছি-
ভালোবাসার জোনাকি-আলোয়
ঢুলুঢুলু চোখে বিষণ্ন মাঝরাতে-
অযথাই খেলেছি অনলাইন-অফলাইনের খেলা

মুঠোফোনে বয়ে গেছে ভালোবাসার এলোমেলো উদাসী হাওয়া
মুঠো মুঠো সুখের জলতরঙ্গ বেজেছে বুকের বন্দরে
কারো কারো হাতে হাত রাখতে গিয়ে-
বহুবার ফসকে গেছে কল্পনার ধারাপাত
কোনো কোনো পূর্ণিমারাতে-
সুখভরা আলিঙ্গনে জড়াতে গিয়ে অসময়ে ভেঙে গেছে ঘুমের প্রহর

এক মানবী অষ্টপ্রহর সাজায় এখন- অন্য কারো বুকের উঠান,
কষ্টগুলো নষ্ট করে একলা থাকে আপন সুখে;
আমার শুধু ভেতর জুড়ে ভীষণ লাগে খুব ধারালো ছুরির আঘাত
এসব কথা খুব গোপনে লুকিয়ে রেখে বুকের ভেতর
আজকে হঠাৎ ইচ্ছে হলো বলেই ফেলি, কী হবে আর গোপন রেখে!

একদিন খাঁ খাঁ রোদমাখা দুপুরে-
হঠাৎ একজোড়া চোখ দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম!
তাকে ভালোবাসতে না বাসতেই হয়ে গেলো ক্যাম্পাসের বদল
অনেকগুলো দিনের ভেতর-
একটিবারের জন্যও সে বলেনি, আমাকে ভালোবাসে;
কোনোদিনও আমার হাতে হাত রেখে-
ভোরের শিশিরে খালি পা ভেজাবে বলে সায় দেয়নি
অথচ আজও নিঃসঙ্গ ভোরে-
একা একা কুড়াই আমি থোকা থোকা শিউলির গন্ধ

কাঁচভাঙার শব্দের মতোন-
কেউ হেসে ওঠেছিলো এক প্রাণভরা পড়ন্ত বিকেলে,
হ্যাঁঠিক এইখানে; আমি তখন একদমই আমিতে ছিলাম না!
হয়তো অনেকটা এই কারণেই-
কাঁঠাল চত্বর আমার অস্তিত্বের আঙিনা, আমার ভালোবাসা
অনেক সাধ করে তার নাম দিয়েছিলাম- নিরুপমা
দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ভালোবাসার সমস্ত শক্তিকে একত্র করে-
যেদিন তার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, খুব সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলো-
তার একান্ত ভূমির প্রশস্ত ময়দানে-
সাড়ে তিন হাত জায়গা পাবার যোগ্যতা আমার নেই
অথচ আমার প্রতিটি শিরায় উপশিরায়-
সা-রে-গা-মা আবহমান সুরের মতোন-
অবিরাম বেজে চলে ভেতর ছুঁয়ে যাওয়া সেই কাঁচভাঙা হাসির সাতকাহন

আমার স্বপ্নহীনতায় নির্মল স্বপ্ন সাজাতে এসেছিলো এক চপল বালিকা
বারবার আমার দুয়ারে সে রেখে গিয়েছিলো প্রেমের নিষিদ্ধ আপেল
আমার ভেতরের প্রেমিক পুরুষটিকে-
জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলো সেই বারোমাসি কোকিল
শত-সহস্রবার তাকে বলেছি-
জেগে থাকা প্রেমকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার নিয়ম নেই পৃথিবীতে

সন্ধ্যার মুখোমুখি নরসুন্দার পাড়ে উদাস বসে থাকা-
এক নিঃসঙ্গ মানবীকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে হয়েছিলো একদিন
ভাবনার সপ্তডিঙায় ভাসতে ভাসতে-
সে নানা রঙের হাঁস গুণে কাটিয়েছে অজস্র বিকেল
কবিতায় কবিতায় মুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম এই রহস্যময়ীকে,
সে হয়তো চায়নি
সে চেয়েছিলো বর্ষার তুমুল বৃষ্টি হতে,
শরতের ধবল নরম মেঘ হতে
ঝিরিঝিরি বাসন্তী বাতাস হতে চাওয়া-
এই স্বপ্নমানবীর ভাবনার ভেলায়-
আনমনে এখনও ভেসে যাই কোনো কোনো অমাবস্যা রাতে

নিরুপমার নিষিদ্ধ নীড়ে আর যাওয়া হয়নি!
পেয়ে হারানোর চেয়ে না পাওয়া নাকি অনেক সুখের;
না পাওয়ার মাঝে নাকি অন্যরকম সুখ আছেবলেছিলো সে
কে জানে, হবে হয়তো
আমাকে যুদ্ধের পোষাক পরিয়ে দিয়ে-
জীবনের উন্মুক্ত ময়দানে লড়াই করতে পাঠিয়েছিলো যে মহারাণী-
সে আর কেউ নয়, এই নিরুপমা!
যার যুগল চোখে চোখ পড়ে গিয়েছিলো বলে-
আজও আমি নিজেকে উজাড় করে ডুবে থাকি ক্লান্তিহীন কবিতার চাষাবাদে

জীবনের পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে
লড়াই করতে করতে বারবার হেরে গেছি আমি
প্রতিটি মুহূর্তের নতুন লড়াইয়ে নতুন করে হারতে হারতে অবশেষে জেনেছি-
ভালোবাসার জন্য যুদ্ধে হেরে যাওয়া, এও তো এক ধরনের বিজয়!

1 টি মন্তব্য: