বন্দী, পাঁজর খুলে ফেলো
শাব্বীর আহমাদ
হুইসেলের শব্দে মাঝরাতে
আমার
ঘুম ভেঙে যায়
কাজ করেনা শেকলবাঁধা
ব্রেন,
আমার পাঁজরের রেললাইন
দিয়ে
যায় মধ্যরাতের ট্রেন।
একটানা ঝন ঝনা ঝনঝন
শব্দ
আমার শেওলাপড়া কান বেয়ে
যায় ঢুকে
গভীর থেকে গভীরে বয়ে
চলে
কিছু শাশ্বত অমোঘ শব্দ
।
শেকলবাঁধা মগজের
কাছে ফিসফিসিয়ে বলে –
"অনেক হয়েছে এবার উঠো
শরীরের ইজারা বাতিল করে শেকল ভাঙো।
"শেকলের শব্দে ঘুম
ভাঙে
আবার শেকলের শব্দেই ঘুম
তবু মধ্যরাতের ট্রেন
চলেছে
ঝুম ঝুমা ঝুমঝুম। "
আলোর দুর্ভিক্ষ
শাব্বীর আহমাদ
চোখ মেললেই তীব্র আলোর
ঝলকানি
রং বেরংয়ের শত শত
বাল্বের কেরদানি
খানিক পর চোখ সয়ে গেলে
পরে
একে একে ভেসে উঠে সব
লোভনীয় পসরা ।
চকচকে তকতকে মাংসল
পুরুষ্ট স্তন,
গভীর নাভি কিংবা মসৃণ
উরু
বেয়ে বেয়ে সমুদ্র
বিহারের আমন্ত্রণ।
হাজার হাজার ওয়াট
বাল্বের নীচে দিশাহারা
চোখে চোখ প্রকাশ্যে
সংগোপন ইশারা
স্ট্রীট জুড়ে মানুষের
চোখে মুখে
বিহবলতা মেশানো
তাড়াহুড়া ।
সূর্যাস্ত থেকে
সূর্যোদয় পর্যন্ত
ব্যস্ত হাতে চলে
বেচাকেনা ।
হেচকির মত দমকে দমকে
উঠা আনন্দ
উত্তেজনা নিয়ে কেউ ঘরে ফিরে চলে
কেউবা নব উদ্যোমে হানা
দেয় নতুন কোন দোকানে।
তারপর সূর্য এলে পড়ে
সব বাল্ব নিভে গেলে
নেমে আসে নিবির
নিস্তব্ধতা
রাস্তাঘাট, দোকানপাট খা খা
দিনের আলোয় অন্ধ সব
মানুষেরা ।
অনেক দূরে শোনা যায়
কিছু কোলাহল
মনুষ্যবিহীন রাস্তায়
খেলাধূলায়
মত্ত পথশিশুদের দল।
দিনকানাদের এই পৃথিবীতে
কেবল ওরাই
বেঁচে আছে কিছু অক্ষত
চোখ নিয়ে
বিপনী বিতান গুলোর
হাজারওয়াট বাল্ব কিংবা
চোখ ঝলসানো প্রাইস
ট্যাগ ওদের করতে পারে নি অন্ধ।
ওরা দিনের বেলা খেলার
শিশু
ওরা রাতের বেলা ঘুমন্ত
যীশু
ওরা বঞ্চিত কিংবা
ওদের বঞ্চিত করে
পৃথিবীবাসী নিজেই বঞ্চিত।
ওরাই পৃথিবীর সব
আলোহীনদের ভীড়ে
সর্বশেষ আলোকপ্রাপ্ত
কয়েকজন।
মুগ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুনমুগ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুন