প্রবন্ধ-রাশেদুল হাসান শাকিল

বিজ্ঞাপন ও বিদেশী চ্যানেল বিড়ম্বনা,প্রতিকারের সুযোগ আছে কি?

রাশেদুল হাসান শাকিল


চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নিমতলা গ্রামের ঘটনা।স্কুলছাত্রী মেয়ে দরিদ্র
বাবার কাছে আবদার করে বসলো তাকে পাখি জামা কিনে দিতে হবে।পাখি জামা কি
সেটা নতুন করে বলা আদিক্ষেতাই হবে।দরিদ্র বাবা ব্যার্থ হলেন,অভিমানী
মেয়ে বান্ধবীদের পাখি জামা ছাড়া মুখ দেখাবে কি করে?এই ভেবে জীবনটাকেই
শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিল!অতঃপর স্কুলছাত্রী গলায় দড়ি দিয়ে চলে গেল
না ফেরার দেশেনব বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ আরো কত কি !হ্যা
বিদেশি নাটকের নায়িকার পরিহিত একটি জামা এতোটাই প্রভাব রাখে আমাদের
জীবনে।তাহলে ভেবে দেখা উচিত ওই নায়িকা কিংবা চ্যানেল কতটা প্রভাব
রাখবে!আচ্ছা আমাদের দেশে টিভি চ্যানেল নেই?কম আছে?নাকি মান এতোটাই
নিকৃষ্ট যে তা দেখার উপোযোগী ই না।অবশ্যই মান একটা গুরুত্বপূর্ন
বিষয়।একজন ভালো মাপের অভিনেতা কিংবা শিল্পী তৈরী হতে যে সময় লাগে তার
থেকে দ্রুত ই বাংলাদেশে টিভি চ্যানেল বেড়েছে গত দশ বছরে।তবে আমাদের আরো
একটি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, 'বিজ্ঞাপন' ।যদিও আন্তর্জাতিকভাবে বলা
আছে প্রতি ঘন্টায় ১২ মিনিটের বেশি বিজ্ঞাপন দেখানো যাবেনা, সে নিয়ম
মানার লোক নেই।প্রতিটি অনুষ্ঠানের মাঝে এতো লম্বা বিজ্ঞাপন বিরতি থাকে
দেশী চ্যানেলগুলোর প্রতি রীতিমত অনীহা দেখাচ্ছে আমরা দর্শকরা।শুধু তাই
নয় বিজ্ঞাপনের সময় নির্বাচনে মনোযোগ নেই টিভি মালিকদের।ধরুন একটা
নাটকের এমন এক মুহুর্তে বিজ্ঞাপন শুরু হল ২০ মিনিট বিরতির পরে দর্শকের আর
সেখানে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়না তখন অভিনয়কে কেবল অভিনয় ই মনে
হয়।প্রতিটি অনুষ্ঠান কমপক্ষে ১০ টি প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে দেখানো হচ্ছে
ফলে দর্শক বিজ্ঞাপন দেখার ধৈর্য্য হারিয়ে অন্য চ্যানেলে যেতে বাধ্য
হচ্ছে সেখানে আবার বিরতি শুরু হচ্ছে।এর পেছনের কারনটি খুব
স্পস্ট,বিজ্ঞাপনের দাম কম।যদি বিজ্ঞাপন প্রচারের দাম বাড়িয়ে সময়টা
কমিয়ে আনা যায় তবে একটা মুক্তি মিলতে পারে।কিন্তু, বিজ্ঞাপনদাতা
বাংলাদেশে বেশি টাকা দিতে নারাজ।যেখানে তারা বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় ৫০
হাজার টাকা দিচ্ছে সেই এক ই বিজ্ঞাপন প্রচারে তারা ইন্ডিয়ান টিভি
চ্যানেলকে দিচ্ছে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা।শুধু বিজ্ঞাপন বিরতি ই কি শেষ
কথা?অনুষ্ঠান চলাকালে টিভি স্ক্রিনের নানান জায়গায় দেখা যায় নানান
পণ্যের বিজ্ঞাপন।যেটা দর্শক নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবে।এই ঈদে(২০১৪) ২০ টি
টিভি চ্যানেলের জন্যে নাটক তৈরী হয়েছে ৩০০ এর অধিক।নৃত্য, গান,ম্যাগাজিন
সহ আরো কয়েকশ অনুষ্ঠান,কিন্তু এই লম্বা বিজ্ঞাপনের জন্যে নির্মাতারা
শংকিত তারা এসব দেখার জন্যে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন কিনা,যা
আমাদের শিল্পে সত্যি ই হুমকি।তাহলে বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনার জন্যে মানুষ
দেশী চ্যানেল বাদ দিয়ে ইন্ডিয়ান বা বিদেশি চ্যনেল দেখছে কেন? সেখানে কি
বিজ্ঞাপন নেই?অবশ্যই আছে!তবে ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে।একটি অনুষ্ঠানের
প্রতি ১৫ মিনিট পর নির্দিষ্ট ৪-৫ মিনিট।তাদের বিজ্ঞাপনের সময় নির্বাচন
দর্শককে আটকে রাখতে বাধ্য করে।তাহলে আমরা কি করবো?কেবল টিভি মালিকদের দোষ
দিয়ে লাভ নেই।দিনশেষে এটাও একটা বানিজ্য।তবে টিভি মালিকদের ও দর্শকের
মনোযোগ আকর্ষনের চেস্টা করতে হবে,কেবল নিজেদের নয়।কারন আকাশ
উন্মুক্ত,হাতে রিমোর্ট-দর্শক ধরে রাখা কঠিন কাজ।অভিনেতারা উদ্যোগ নিতে
পারেন এবং অবশ্যই সরকার চাইলেই নীতিমালা কেবল কাগজ কলম থেকে কার্যকর হতে
পারে।আশার কথা হল এই যে, বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী বলেছেন এই ঈদের পরেই
বিজ্ঞাপন নীতিমালা মন্ত্রীসভা বৈঠকে পাশ হবে।সরকার ডি টু এইচ বা ডাইরেক্ট
টু হোম সার্ভিস বাধ্যতামূলক করতে চাচ্ছে,এতে চ্যানেলগুলো লাভবান হবে এবং
কেবল বিজ্ঞাপন নির্ভর থাকবেনা।বিজ্ঞাপনদাতারা অনুষ্ঠানের আগে পরে
বিজ্ঞাপন দিয়ে অনুষ্ঠানকে বিরতিহীন রাখতে সহমত দেখাচ্ছেন অনেকক্ষেত্রেই।
তাই আমি বলি,আমরা আশা করতেই পারি সরকার,বিজ্ঞাপনদাতা এবং টিভি মালিকেরা
মিলে ৯০ এর দশকের টিভির গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে সচেস্ট হবেন নতুবা আমাদের
শিল্পে পাখি জামার মত মহামারি অমঙ্গল বয়ে আনবেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন