কবিতা- রায়ান নূর

আজরাঈলের চোখ

রায়ান নূর


বাইশ বছর গেল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
পঁচিশের ডগায় মন হল চেতন
সংসারে তাই গা না ভাসিয়ে
পাঁচটি বছর করেছি বিনোদন ৷
চাকরীর নেশা,সংসার-জ্বালায়
কুঁকরে যখন মরছি দশে
হঠাৎ জাগল বিদ্যার কেতন
পড়ছি তাই চল্লিশে বসে ৷
দৌড়ের উপর টাকার চিন্তা
দিবসে খাদ্য অনেষণ
হলনা বিদ্যা পেকেছে চুল
অশান্তিতে মন বিলক্ষণ ৷
পঞ্চান্নই জড়সড় জেকে বসি
দেশের কাজ করতেই হবে
লিখতে বসেছি কয়েক বই
কলম ধরলে আসে ইতিকথা জীবনের
প্রাণ আছে তবু তার মানুষ কই ৷
কিছুই হলনা লেখা সকলি রইল পড়ে
ষাটের ঘাটে সবে পড়ল পা
লোকে দলে দলে বাড়িতে সুধায়
পরকালে যত সুখের শিরোপা ৷
সব ছেড়ে বসে পড়ি জায়নামাজে
হারিয়েছে সকল খেয়াল 
কিছুই থাকেনা মনে দেখিনা ভালো
সামনে দোযখের দেয়াল ৷
হঠাৎ বাড়িতে জেগেছে কেন
মৃত্যুর শোরগোল
সবই তো রয়েছে পড়ে
কীসে এত গন্ডগোল ৷
পুরনো হিসেবগুলো মিলিয়ে দেখি
বারান্দার চৌকিতে শুয়ে
সবই ঠিক জীবনের বিচারে
কেবল বয়সটুকু গেছে খুয়ে ৷
কেউ আমারে চিনে কি আজ
দিতে তো পারিনি কাওকে সুখ
যা পেয়েছি লুফে নিয়েছি তাই
হঠাৎ দেখি আজরাইলের চোখ ৷

কবিতা-দীননাথ মণ্ডল

নিমন্ত্রণ

দীননাথ মণ্ডল


এসো বন্ধু আমার গাঁয়ে
শিশির চুম্বন দেবে পায়ে।
ঘুরতে যাবে সবুজ মাঠে
বন্ধু হবে গাছের সাথে।
মাঠটি ঢাকা সবুজ চাদর
বসলে তোমায় করবে আদর।
দোয়েল ফিঙে অনেক পাবে
ঘোরার সাথী হবে।
শিউলি ফুলের সুবাস এসে
উপহার দেবে ভালোবেসে।

নৌকা নিয়ে ঘুরতে যাব
শীতল বায়ুর সঙ্গ পাব।
পদ্ম শালুক দেখব ঘুরে
নদীর সারা বক্ষ জুড়ে।
শোল ছিমড়ি বাটা কই
পানকৌড়ি ধরবে ওই।
নদীর চড়ায় নামব মোরা
দেখব শুধু বালুর ছড়া।

সাঁঝের বেলায় জোনাকির আলো
দেখলে তোমার লাগবে ভালো।
ইচ্ছে হবে রাখতে ধরে
নিয়ে যেতে ওই শহরে।
ঘুরতে এসো বন্ধু তুমি
ফেলে তোমার শহর ভূমি।
আনবে সাথে উদার মন
রইল তোমার নিমন্ত্রণ।

কবিতা-আবুল বশর শেখ এর ২'টি কবিতা

যুগ যুগ

আবুল বাশার শেখ


অনেক গভীরে যেতে চাই
তোমার আশার ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
অনেক গভীরে।

রঙের বৈচিত্র দাগ কাটে
ভাল লাগে,ভালোবাসি,
কবিতার ছন্দ উপমায়
লুকানো তোমার হাসি।

কি যে ভাল লাগে
বুঝাবো কি ভাবে,
ভেতরে কবিতা
নিরবতায় জাগে।

অনেক গভীরে যেতে চাই
দেবে কি একটু সুযোগ,
আমি মানুষ মানবতায় বাধা
যুগ থেকে যুগ।।




আলোকিত পথ

আবুল বশর শেখ 


সারা দিন কেটে যায় সষ্ট্রার সান্নিধ্য পেতে
নিয়্যাত অনেক ভারী,
সুখ টান না দিলে মাথাটা ঠিক থাকে না,অথচ
এখন দিব্যি সময় কাটে নেশা হীন।
কি অপূর্বি মহিমা,মাসটা এসেই পাল্টে দিল
কত শত,সহস্র,লক্ষ কিংবা কোটি মানুষকে
যারা ভাবতো নেশা ছাড়া এক ঘন্টাও চলা অসম্ভব
আজ তারাই পার করছে সেহরী থেকে
ইফতার পর্যন্ত দীর্ঘ সময়।
আহা খোদার কি অপার মহিমা,কি নেয়ামত
মানুষকে দিয়েছেন আলোকিত পথ।।

কবিতা-সুমন্ত গোস্বামী

ইচ্ছে

সুমন্ত গোস্বামী



আজকাল আমার ইচ্ছেগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে,
একশো পাতার ইচ্ছেগুলো, পাঁচ লাইনে শেষ।
জানিস, কোনো কিছুতেই আর তেমন
আনন্দ পাই না। আমার মনের বয়স যেন
হঠাৎ করে অনেকবছর বেড়ে গেছে;
ভাবিস না আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি! বয়স
বাড়লেই কেউ বুড়ো হয় না। সম্যক জ্ঞানই,
মানুষের বার্ধক্যের কারন।
আর ইচ্ছে হয় না, হয়না বলেই,তোর সাথে
কথা বলায় কোনো আগ্রহ নেই; বন্ধুদের সাথে
আড্ডাও মারতে পারি না। কে একটা পিছন থেকে
তাড়া করে চলেছে,আস্ত একখানা লেজ পিছনে
ঝুলিয়ে আমার পিছনে ছুটছে, ঠিক শিম্পাঞ্জীর
মতো।
তাই আজকাল কেউ আমাকে শান্ত ভাবে হাঁটতে
দেখেনা; আমি অনবরত ছুটতে ছুটতে চলেছি।
শুধু স্ট্রেন্থ বা মেসিন ড্রয়িং আঁকতে বসলে ঘুমিয়ে
পড়তে ইচ্ছে হয়।
ইচ্ছে হয় রোজ রোজ প্রোফেসরদের লেকচার না শুনে
এক-আধ দিন জীবনানন্দের ২-৪ পাতা খুলে বসি।
ইচ্ছে হয় আমার সমস্ত ঘৃণা উগরে ফেলে একটা
ঘৃণাশুরের জন্ম দিতে; যেটা আমার সমস্ত এসাইন্-মেন্ট
সিট গুলো তুলে নিয়ে সাগরে নিক্ষেপ করবে।
কিংবা;
আমাকে ওই লম্বা তাল গাছটার মাথায় তুলে
দেবে। যেখান থেকে আমি কক্ষনো নামব না, শুধু
ওখানে বসে বসেই হাওয়ায় পা নাচিয়ে দোল খাব।

কবিতা-সিয়ামুল হায়াত সৈকত

মোহনায় বিষাদ নীলিমার সংসার

সিয়ামুল হায়াত সৈকত


হিশেবের সন্ধিরা বাকাঁ গ্রিনলাইন ধরে ডানপিটে হয়
অবৈধ কাকপাখি শহরের কার্ণিশে স্বপ্ন বোঝাতে ব্যর্থ
ঝাঁপি খোলা রিক্সায় কেউ চাঁদ জুড়ে দেয়
অপরাধ কিছুটা সময়েরও !

সুই সুতোর ডাস্টবিন দুঃখ বোঝেনা
সুই সুতোরা অনেক দূরে -

কেউ নেই হতাশার ছাদগুলোতে
কাকপাখির গানে কাকপাখিই সাইড নায়ক।।

কবিতা-আশরাফুন নাহার

আলিঙ্গন

আশরাফুন নাহার


একি সখাসখি
দেখি চোখাচোখি
 মিলন আঁখির দর্পনে

আরো কাছাকাছি
করি মাখামাখি
 ওষ্ঠযুগলে অর্পনে

না নড়ে অলক
না পড়ে পলক
 হৃদয়বীণার কম্পনে

জাগবে আশা
বাঁধবে বাসা
 হংসমিথুন তনুমনে

সুখের স্পর্শ
জাগালো হর্ষ
 ক্ষণিক সুখের অনুক্ষণে

নীলমণি হার
দিলাম উপহার
 এই মধুর আলিঙ্গনে

কবিতা-শাব্বীর আহমাদ এর ২'টি কবিতা

বন্দী, পাঁজর খুলে ফেলো

শাব্বীর আহমাদ


হুইসেলের শব্দে মাঝরাতে আমার
ঘুম ভেঙে যায়
কাজ করেনা শেকলবাঁধা ব্রেন,
আমার পাঁজরের রেললাইন দিয়ে
যায় মধ্যরাতের ট্রেন।

একটানা ঝন ঝনা ঝনঝন শব্দ
আমার শেওলাপড়া কান বেয়ে যায় ঢুকে
গভীর থেকে গভীরে বয়ে চলে
কিছু শাশ্বত অমোঘ শব্দ ।

শেকলবাঁধা মগজের
কাছে ফিসফিসিয়ে বলে –
"অনেক হয়েছে এবার উঠো
শরীরের ইজারা বাতিল করে শেকল ভাঙো

"শেকলের শব্দে ঘুম ভাঙে
আবার শেকলের শব্দেই ঘুম
তবু মধ্যরাতের ট্রেন চলেছে
ঝুম ঝুমা ঝুমঝুম। " 




আলোর দুর্ভিক্ষ

শাব্বীর আহমাদ


চোখ মেললেই তীব্র আলোর ঝলকানি
রং বেরংয়ের শত শত বাল্বের কেরদানি
খানিক পর চোখ সয়ে গেলে পরে
একে একে ভেসে উঠে সব লোভনীয় পসরা ।

চকচকে তকতকে মাংসল পুরুষ্ট স্তন,
গভীর নাভি কিংবা মসৃণ উরু
বেয়ে বেয়ে সমুদ্র বিহারের আমন্ত্রণ।

হাজার হাজার ওয়াট বাল্বের নীচে দিশাহারা
চোখে চোখ প্রকাশ্যে সংগোপন ইশারা
স্ট্রীট জুড়ে মানুষের চোখে মুখে
বিহবলতা মেশানো তাড়াহুড়া ।

সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত
ব্যস্ত হাতে চলে বেচাকেনা ।
হেচকির মত দমকে দমকে উঠা আনন্দ
উত্তেজনা নিয়ে কেউ ঘরে ফিরে চলে
কেউবা নব উদ্যোমে হানা দেয় নতুন কোন দোকানে

তারপর সূর্য এলে পড়ে
সব বাল্ব নিভে গেলে
নেমে আসে নিবির নিস্তব্ধতা
রাস্তাঘাট, দোকানপাট খা খা
দিনের আলোয় অন্ধ সব মানুষেরা ।

অনেক দূরে শোনা যায় কিছু কোলাহল
মনুষ্যবিহীন রাস্তায় খেলাধূলায়
মত্ত পথশিশুদের দল।

দিনকানাদের এই পৃথিবীতে কেবল ওরাই
বেঁচে আছে কিছু অক্ষত চোখ নিয়ে
বিপনী বিতান গুলোর হাজারওয়াট বাল্ব কিংবা
চোখ ঝলসানো প্রাইস ট্যাগ ওদের করতে পারে নি অন্ধ।

ওরা দিনের বেলা খেলার শিশু
ওরা রাতের বেলা ঘুমন্ত যীশু
ওরা বঞ্চিত কিংবা
ওদের বঞ্চিত করে পৃথিবীবাসী নিজেই বঞ্চিত।

ওরাই পৃথিবীর সব আলোহীনদের ভীড়ে
সর্বশেষ আলোকপ্রাপ্ত কয়েকজন।