মুক্তগদ্য-মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস


কোটিপতির পাশে নিঃস্ব পৃথিবী

মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস


সন্ধ্যার পর একে একে এখানে সমাবেত বিভিন্ন পেশার মানুষ। রাতটুকু কাটানোর আশায় পরিবার নিয়ে এখানেই ঠাঁয় গেড়েছে কতিপয় নিম্নবিত্ত শ্রেণী। ওদের সকাল হয় ছুটন্ত ট্রেনের এলার্মের মাধ্যমে। ট্রেন তাদের জীবনে ঘড়ির বিকল্প হিসেবে কাজ করে। যদিও সেই ঘড়ির সময় বরাবরই স্লো হয় কোটিপতির সীমানা প্রাচীরের গলা ধরে এরা গড়ে তুলে অস্থায়ী নিবাস। প্রতি ভোরে এখান থেকেই ওরা ছুটে চলে নিজ নিজ পেশায় আবার কেউ ছুটে পেশার সন্ধানে। দুমুঠো অন্ন জোগাতে ওদের যতোনা কষ্ট বিনোদনে তাদের আগ্রহ ততই প্রবল। ১০ফিট বাই ৮ফিট প্রতিটি ঝুপড়িতে ঠায় পেয়েছে ডিস কেবলযুক্ত ১৭ ইঞ্চি রঙ্গিন টিভি। সাথে রাখা ডিভিডি প্লেয়ারে অহর্নিস চলে ইন্ডিয়ান বাংলা সিনেমা। সেখানে দেব এসে শিখিয়ে যায় ১০০% লাভ। মেহমানদের জন্য সোকেসে রাখা ডিনারসেটে তাদের অতিথিপরায়নতার প্রমাণ মিলে। প্রতিটি ঝুপড়িতে বেড়ে উঠে এক একটি পৃথিবী
এখানে বাড়তে থাকা অপরিনত মন পাকা রাস্তার পাশেই বসে বালি দিয়ে তৈরী করে প্রাসাদ আবার তা ভেঙ্গে দেয় অভিমানে। ঝুপড়ির সাথে খেলে চলে লুকোচুরি, বরফপানি খেলা। তাদের কেউ স্কুলে যায় কেউ যায়না, কেউ যায় অল্পবয়সেই ভ্রাম্যমান কর্মস্থলে
রাস্তার পাশেই তাদের হেঁসেল। এখানে রান্না হয় মাটির চুলোয় আর তাতে ধুলোও এসে ভাগ বসায়। এখানেই অনেকে পুজি গড়ে, কিস্তিতে অনেকে শেখাতে আসে আধুনিকতা। ঘরের ভেতরেই গড়ে উঠে বিউটি পার্লার। এখানে নাকি নেশাও বিক্রি হয়, রাত্রি হলেই পসার বসে দেহের
এখানে প্রতিটা আলাদা মানুষের এক অন্তর, বিপদে সবাই সবার পাশে। এখানেই ছোট্ট ঘরের অন্ধকারে পৃথিবীতে আসে নতুন অতিথি। তার নিজের ঘর চেনার আগেই শুরু হয় রাজউকের অভিযান। দুরন্ত ঈগলের মতো ছুঁ মেরে কেড়ে নেয় তাদের আবাসস্থল। হারিয়ে পুরোনো আবাস তাদের খুঁজতে হয় নতুন কোন ঠিকানা। তারা নীড়ের আশায় ভীড় করে অন্যকোন স্থানে
তারা আরামপ্রিয় হলেও জীবনের প্রয়োজনে কখনো থেমে থাকে না।

-১৪ মাঘ'১৪১৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন