কবিতা- অরণ্য সৌরভ এর ৩'টি কবিতা

নিরন্তর প্রতীক্ষা

অরণ্য সৌরভ


ছেলে - এখন অনেক রাত
কোথাও কেউ জেগে নেই
সমস্ত বাড়ির আঙিনাটা স্তব্ধ হয়ে আছে
দু'চারটে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে
আখিঁ যুগলে নেই ঘুমের ছায়া
ঘুম যেন অভিমান করেছে
আজ আর দেখা মিলবে না
নিঘূর্ম কেটে যাবে সারাটি রাত
কারণ শুধু একটাই
তোমাকে বিষন মনে পড়েছে,মা।
দক্ষিনা জানালা খুলে দিয়েছি
দেখবো চাঁদে তোমার মায়াবী মুখ।
তোমাকে আজ দেখবো বলে,মা
চাঁদটা যেন আমার সাথে খেলা করতেছে
মাঝে মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘের আড়ালে।
এই দৃশ্য দেখে
আমার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে
মনের ভেতর তোমার পুরনো
স্মৃতি গুলো খেলা শুরু করেছে।
তোমাকে আজ খুব মনে পড়ছে,মা
আজ তুমি যদি আমার পাশে থাকতে
মা বলো তো,তুমি আমাকে
একলা ফেলে কেন চলে গেলে?
কেন চলে গেলে?
আজ অনেক দিন পরে
তোমায় নিয়ে লিখতে বসেছি,মা
মনের ভেতর হাজার প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে আজ।
কি লিখছো,কি ভাবছো
বেশি রাত জাগতে নেই
বিকেলে মাঠে যাবে,সন্ধার আগে বাসায়
রাতে লিখে না বাবা,রাতে পড়তে হয়
এছাড়া আরো কত কি ???
তুমি তো বেশ ভালো করেই জান
এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারেনি
কোনো দিন দেওয়ার চেষ্টা করেনি।
মা,তোমাকে আজ খুব মনে পড়েছে
তোমার দেওয়া উপদেশগুলো
আজো আমাকে তাড়ায়
ঘুমোতে দেয় না ঠিকমতো
পড়তে দেয়না,হাটতে দেয়না
বারবার মাথায় আঘাত করে।
মা,আজ তোমায় খুব মিস করছি।
মাগো,তুমি বলে দেওনা
আমাকে যেন আর তাড়া না করে
আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।।
মা - তুমি আমার কথা শোনোনি কোনদিন
কোন দিন চেষ্টা পর্যন্ত করলে না।
তুমি পেয়ে টুকটুকে বউ
গেছো ভুলে আমাকে।
আমি কেমন আছি? কি করছি?
একাএকা থাকতে কেমন লাগে?
জানতে চাইলে না কোনদিন
জানতে চাইলে না....
একা একা কি করছি আপন মনে?
জানো বাবা,তখন তোমাকে
আমি সবচেয়ে বেশি মিস করে ছিলাম
তুমি তখন থাকতে সুদূর ঢাকা তে
আর আমি অজপাড়া গাঁয।
তোমাকে দিয়েছিলাম বাহান্নটা চিঠি
আমার নিজ হাতে লিখে
কিন্তু আমি পাইনি একটিও।
একদিন হঠাৎ আমি চলে এলাম
বাঁশবাগানের নিচে,মিশে গেছি
মাটির সাথে;ভারী বন্ধুত্ব্ব হয়ে গেছে
বাঁশ,পাটি,মাটি,একখান সাদা
ধবধবে কাপড়ের সাথে.....
বাবা জানো,তোমার কথা বলেছি
আমার সব বন্ধুদের সাথে
তোমার কথা শুনে শুনে; সবাই শুধু
অট্ট হাসি হাসে;আমার খুব খারাপ লাগে
তাদের কে কিছুই বলি না
জানো কেন? জানো
অভিমান করে যদি সবাই দূরে চলে যায়
আমি তো তখন বিষন একলা হয়ে যাবো।
তুমি ভালো থাকো খোকা
আজ তবে এখানেই......।।




তোমাকে দেখবো বলে

রণ্য সৌরভ



নেক দিনের ইচ্ছে
সূর্যের ডুব ডুব
রক্ত রাঙ্গা অস্তিমজ্জা দেখবো
মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে
খুব কাছ থেকে.......
শুনেছি সেই রক্তিমতায় মিশে আছো তুমি
তাই নাকি রক্তিমতা তার আসল রুপ নিয়ে
মেঘনার স্বচ্ছ পানিতে নামে।
তাই অনেক ইচ্ছে নিয়ে
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে গুনে
সেদিন গিয়েছিলাম মেঘনার পাড়ে
রক্তিমতার মাঝে তোমাকে দেখবো বলে।
ইচ্ছে ছিল তোমার কাছে বলবো
না বলা কিছু কথা,
আর শুনাবো তোমাকে দেখার
প্রবল ইচ্ছার গল্প গুলো.......
কিন্তু সেই সৌভাগ্য আমার হলো না
আমি যেদিন তোমায় দেখতে গিয়েছিলাম
সেদিন যে ছিল প্রবল মেঘাচ্ছন্ন সেদিন তোমার
অস্তিত্ব আসেনি।
তবে আজ দেখতে পারিনি, কাল দেখবো
তবুও রক্তিমতার মাঝে তোমায় দেখবো।
তোমাকে বলবো না বলা কথা
শুনাবো ইচ্ছার গল্প গুলো......।।।




চলো গ্রামে ফিরে যাই

অরণ্য সৌরভ


তোমাকে ভালোবাসি বলেই
আকুল হৃদয়ে হেঁটে হেঁটে আজও
ফিরে যাই তোমার সেই চিরচেনা মাটিতে
ছাঁয়া ঘেরা সবুজের সমাহারে।
তোমাকে ফেলে এসে আমার
আজও মন কাঁদে বারবার
স্মৃতির সেই প্রান্তরন্ত স্বপ্ন ময় প্রহর
আমাকে আজও কাঁদায় একলা
মনের ভেতর গেঁথে রাখা পুরনো সেই
অতীতময় দিনগুলো আজও খুঁজে বেড়াই।
আমি পাইনা সেই প্রহর
যেতে পারিনা ফিরে অতীতে
শুধুই ভিজে উঠে দু'নয়ন।
তোমার বুকে যেতে চাই আজও
শত চেষ্টায় যেতে পারিনা আমি
আমার জীবনের কেরিয়া গড়ার জন্য।
তোমার কথা মনে হবার সাথেই
আমি ভুলে যাই জীবন কেরিয়া
ভুলে যাই জীবন..........
তোমার সেই চিরচেনা রুপ আমি
ভুলিতে পারিনা শত চেষ্টায়
বারবার মনে পড়ে যায়
তোমার সমস্ত শরীর সবুজে সমাহার
ভুলিতে পারিনা আজও
তোমার বুকে আমার প্রথম পদাপণ।
বারবার আমার হৃদয়কে ঝাকুনি দিয়ে যায়
তোমার কাছে রেখা আসার স্মৃতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন