ছোটগল্প-সিয়ামুল হায়াত সৈকত

বাস্তবতা কিংবা কিছু অসমাপ্ত গল্পের লাইন..

সিয়ামুল হায়াত সৈকত


- আইসক্রিম খাবে অদিতি ?
-
এই অসময়ে আইসক্রিম (!)
-
তুমি খাবে কিনা বলো ?
-
ঠিক আছে। ( অদিতি সম্মতি দিল )
রাস্তার ওপাশে আইসক্রিমের দোকান, খুব ভীড়।অদিতির সম্মতি পেয়ে ভীড় থাকা
সত্ত্বেও সুদীপ্ত আইসক্রিম আনতে গেল। "ছেলেটি এত ভালো কেন?" অদিতির মনে
হটাৎ যেন অতীতের ছন্দোদ্ভাসিত বন্ধন মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। সেই দূর্গা
পূজোর সময় পরিচয় হওয়া ছেলেটি কি করে এত আপন হয়ে উঠলো। মামাতো ভাই দেবাশীষ
এর বন্ধু ছিল সুদীপ্ত,মাত্র দু'ঘন্টার পরিচয় তাতেই এখন একজন যেন আরেকজনের
প্রাণ। দেবাশীষের অফিসে কি যেন একটা পোষ্টে আছে সুদীপ্ত, সেই সুবাদে
অষ্টমীর দিনে দেবাশীষের সাথে সুদীপ্তও এসেছিল অদিতির এলাকার পুজো মন্ডপে।
সেই দিন থেকে নবমী, দশমী আর প্রত্যেক টি বিকেল সুদীপ্তের সাথে দেখা করা
চাই- চাই অদিতির্। হয়তো এটাই ওদের ভালবাসা। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কেউ কাউকে
মুখফুটে একবারও বলেনি।
-
এই নাও..
- (
ধরফর করে) ওমা! তুমি এসেছ?
-
দাড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর লাগছে তাই না?কি করব বলো দোকানটাতে অনেক ভীড়।
-
না ঠিক আছে।
-
কিছু ঠিক নেই, চলো আজ তোমাকে নিয়ে ভাল একটা রেস্তোরাঁর খাবো..
-
আমি এখন বাড়ি যাব!
-
কেন?
-
অনেক দেরি হয়ে গেছে, মা নির্গাত বকা রেখে মার দিবেন।
-
হাহাহা..এত বড় মেয়েকে কেউ মারবেন। হাহাহা..
-
হাসবেন না কিন্তু বলে দিলাম। আমি যাব।
"
এই যে রিক্সা?" অদিতি হাত দিয়ে ইশারা দিল রিক্সাওয়ালাকে। কাছে আসতেই টুপ
করে রিক্সায় উঠে পড়ল সুদীপ্ত দাড়াতে বললো তবুও অদিতি থাকলো না। রিক্সার
পিছনের পর্দা সরিয়ে শেষ বারের মত সুদীপ্ত ছেলেটাকে দেখল অদিতি। ছেলেটি
কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওর তাকানোর মাঝেও কেমন জানি মায়া, যা
শুধু অদিতিই বুঝতে পারে।

রিক্সা চলছে আর যেন অদিতির অতীতচারণ খুব করে হচ্ছে। আজ অভিকের কথাও বেশ
মনে পরছে অদিতির। বাউন্ডুলে ছিল ছেলেটা। এত করে ভালবাসা ছিল দুজনের মাঝে
তা বলে বোঝান সম্ভব ছিল না। নিতান্তই ছা-পোষা ভাবুক টাইপের ছিল অভিক।
সুদীপ্ত' মত প্রত্যাহ বিকেলে একসাথে ঘোরা আর আইসক্রিম খাওয়ানোর মত পয়সা
থাকতো না অভিকের্। তারপরও অভিক ছিল অসংখ্য সুর ছন্দময় মানুষ। মাঝে মাঝে
যখন একসঙ্গে দুজন হাটতো তখন সুনীলের কবিতা, রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনাত।
বেশ ভালো গলা ছিল অভিকের্। হয়তো ওকে ভালো লাগার কারনেই ওর সব কিছু ভালো
লাগতো। কিন্তু.. কিন্তু হটাৎ কি যেন হয়ে গেল আর অভিক হারিয়ে গেল অদিতির
স্বপ্নযাত্রা থেকে। হাস্সোজ্জল ভাবে বাদাম চিবুতে চিবুতে অভিক যে বলবে
"
আজকের পর থেকে আর আমরা দেখা করবো না, আমি ইন্ডিয়া চলে যাচ্ছি মামার
বাড়িতে" তা এখনও মানতে পারছে না অদিতি। প্রথমে ভেবেছিল ফান করছে কিন্তু
দুদিন পর ঠিকই জানতে পারলো অভিক মেস বাসা ছেড়ে ভারতে চলে গেছে।যোগাযোগ
করার কোন মাধ্যমও ছেড়ে যায়নি, এমনকি কোন ফোন নাম্বারও। আর তাই এখন
অভিকের শূন্যস্থান অনুভব করে অদিতি।খুব করে।
-
ক্রিংক্রিং..আফা বাসার সামনে চইলা আসছি।

(
কাহিনী এখানেই শেষ। এরপর সুদীপ্তের সঙ্গে অদিতির বিয়ে হয়, একটা ফুটফুটে
বাচ্চাও হয়। সুখে শান্তিতে ঘর সংসার চলে দুজনের্। আর বাকি রইল অভিক।
অভিকের নাকি ইন্ডিয়াতে মামার সার কারখানায় একটা চাকরি হয়েছে, অদিতিকে
রেখে যাওয়ার তিন বছর পরে একবার ফোন দিয়েছিল। তখন অদিতির সুখের ঘরকন্না
চলছিল সুদীপ্তের সঙ্গে। এরপর তেমন ভালো করে কেউই যোগাযোগ করেনি। )

এভাবেই চলছে আমাদের বাস্তবতা। জীবনের কাছে আমাদের সবি
ম্রিয়মাণ..অস্তিত্বহীন..এমনকি ভালবাসাও!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন