সাক্ষাৎকার-শিরীন সুলতানা সমপা


সাহিত্য-কাননঃ শুরুতেই যদি পরিচয়টা জানা যেত ভালো হতো,আপনার নাম,পেশা এবং নিজেকে নিয়ে কিভাবে ভাবতে ভালো লাগে?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ আমার নাম শিরীন সুলতানা সমপা, খুব সাধারণ একজন গৃহিণী। আমি সে অর্থে লেখক নই, নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো মাঝেমাঝে গল্পের আকারে তুলে ধরতে চেষ্টা করি। লেখালেখির জগতটা ভীষণ ভালোলাগার জায়গা হলেও আমি এখানে নিয়মিত নই, মন চাইলেই লিখি।

সাহিত্য-কাননঃ সাহিত্যের সাথে আপনার পরিচয় কি করে?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ স্কুলজীবনে দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসর পাতায় রোকুনুজ্জামান খান ওরফে দাদাভাইকে নিয়মিত চিঠি লিখতাম। মূলত প্রথম উনার উৎসাহেই আমার মনে লেখার প্রতি প্রথম দূর্বলতা তৈরী হয়। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তরের চিঠিপত্র বিভাগ, দৈনিক প্রথম আলোর বন্ধুসভার পাতায় কিছুদিন লিখেছি।

সাহিত্য-কাননঃ কি ধরনের লিখা আপনার পছন্দ?কারণটা ও যদি বলতেন...

শিরীন সুলতানা সমপাঃ সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী লেখা। কারণ, তাতে নিজের আবহটাও খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও জানি, বাস্তবতার সাথে কিছুটা কল্পনার ছোঁয়া না থাকলে লেখা অধিক আকর্ষণীয় হয়না।

সাহিত্য-কাননঃ সাহিত্যের কোন বিষয়টি আপনার নিকট অধিক আকর্ষনীয়?এবং কেন?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ অবশ্যই ছোটগল্প আর উপন্যাস। কবিতা পড়তেও আমি ভীষণ ভালোবাসি।

সাহিত্য-কাননঃ কবিতাকে আপনি কিভাবে দেখেন?মানে কবিতা আপনার মাঝে কিভাবে কাজ করে?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ সহজ-সরল ভাষায় লেখা কবিতাগুলো আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। সেইসব কবিতা, যেখানে অল্প কথাতেই জীবনের নানা দিক ফুটে উঠে। কিছু কবিতা পড়লে মনে এমন অনুভূত হয় যে, এ যেন একান্তই নিজের মনের কথা।

সাহিত্য-কাননঃ পূর্বের তুলনায় বর্তমান মানুষেরা কবিতার উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে-কথাটির সাথে কি আপনি একমত?যদি তাই যদি হয় তাহলে এর কারণ কি?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ না, আমার তা মনে হয়না। কবিতার প্রতি এখনো মানুষের সমান আগ্রহ আছে, অন্তত আমার তাই মনে হয়।

সাহিত্য-কাননঃ পূর্ববর্তী কবিদের লিখার সাথে বর্তমান কবিদের লিখায় বিশেষ কোন পার্থক্য কি আপনার চোখে পড়ে?সেটা কেমন?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ  সময়, অবস্থান, পারিপাশ্বিকতার পরিবর্তনের সাথে সাথে লেখকের চিন্তাধারাতেও পরিবর্তন আসে। আর তার ছাপ তাঁদের লেখার উপর পড়বেই।

সাহিত্য-কাননঃ যাদের লিখা আপনার ভালো লাগে,সে সম্পর্কে যদি বলতেন...

শিরীন সুলতানা সমপাঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প, কবিতা, উপন্যাস সবসময়ই অধিক আকর্ষণের ক্ষেত্র। এখনকার কবিদের মধ্যে নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজের কবিতা পড়তে ভালো লাগে।

সাহিত্য-কাননঃ আপনার মতে সাহিত্যের সৌন্দর্যটা কিরকম হওয়া উচিত?

শিরীন সুলতানা সমপাঃ সাহিত্যের লক্ষ্য হচ্ছে সৌন্দর্য, আর সৌন্দর্য বিষয়টা সবসময় সবার কাছে একরকম নয়। বিষয়বৈচিত্র্য না থাকলে রচনাও অধিক আকর্ষণীয হয়না। তবে লেখা নৈতিক আর যুক্তিসঙ্গত হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়, সাহিত্যের সৌন্দর্য বোধকরি তাতেই পরিস্ফুট হয়।

কবিতা-ফারজানা শারমিন মৌসুমী

হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়...

ফারজানা শারমিন মৌসুমী


হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়
পড়েছি রঙধনু রঙ শাড়ি
 অপরূপ চন্দ্রাহার তারার গহনা
 কানে পড়েছি জোনাকির দুল , হাতে ঝিনুকের চুড়ি
নি:শব্দ সীমাহীন গহীনে আকাশ হলো সাথী
 একাকী হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়
 দেখেছি বাদুর আধারে ডানা মেলে যায় হীম জোছনায়
 রহস্যময় আবেগীমন চায় পূর্ন স্পন্দন
যেতে চায় গভীর থেকে গভীরতম সমুদ্রে
যেখানে অনাবিল আনন্দ স্বপ্নের বিথীকায়
হেটে চলেছি আমি বন জোছনায়.................

কবিতা-দুর্জয় বৈদ্য

কাকস্যপরিবেদন

দুর্জয় বৈদ্য


তোমার কি ধারণা ,
সমুদ্রের জল দূর থেকে ধেয়ে আসে কেবল তোমার পায়ে আছড়ে পড়বে বলে?
মাতাল হাওয়া কি শুধু তোমার চুল এলোমেলো করে দিতে বয় ?
দুপুরের কড়া রোদ কি এই জন্য ওঠে , 
        যাতে তুমি রিকশার হুডটা তুলে দাও ?
বাগানে গ্লাদিওলাসের চাষ করা হয় কি তোমার হাতের মুঠোকে রঙিন করতে ? 

মাঠের সরিষা কেন এতো হলুদ হয় ?
     তুমি যখন তোমার জীর্ণ শহর ফেলে ছুটে যাও , তোমাকে অভিবাদন জানাতে?
ধানক্ষেতের মাঝে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা বক কি তোমার অপেক্ষাতে  থাকে?
     যাতে তুমি ওকে দেখে তোমার রক্তিম ঠোঁটের আশেপাশে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে নাও?
শীতের ফ্যাকাসে আকাশ কি তোমার শাড়ির রঙে সাজতে বসন্তে আকাশি বরন ধারণ করে?

হঠাৎ মরা বিকেলের আলোকে মাড়িয়ে দিয়ে মাতাল হাওয়া কেন আসে ?
         শুধু তোমার পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিতে ?
আকাশ ভেঙ্গে মেঘের দল কেন বৃষ্টি হয়ে নামে ?
         শুধু তোমার জন্য নবধারা জলের ব্যবস্থা করতে?

এসব কিছুই কখনো তোমার জন্য হয় নি ।
হবেও না ।
তোমার জন্য কেবল এই শহরের অতি সাধারণ এক যুবকের ,
       রাতের পর রাত কাটে নিদ্রাহীন ।
       কবিতার খাতার প্রতিটা পৃষ্ঠাতে সে তোমাকে স্থান করে দেয় ।
       তার হাতটা বাড়িয়ে সে তোমার আঙুলগুলোর খোঁজ করে ।
কিন্তু তার সবকিছুকে কাকস্যপরিবেদন করে ,
         তুমি কত সহজেই না খুঁজে নাও অন্য কোন হাত !
               কত সহজেই না তুমি ভুলে যাও সব ! 

কবিতা-রায়ান নূর

নৈসর্গ-সহবাস

রায়ান নূর


পর্বতের গা বেয়ে নামছে ঝর্ণা
নদীর প্রবাহে লাগে শিহরণ
শ্যামলিমা চিত্র অনুভুত হয়
আর জেগে ওঠে বৃক্ষের মগডাল

মাংসে তার উষ্ণ আভা আর ফিকে গন্ধ
বৃক্ষগুলো কলরবে পথ চলে
মাথা খাড়া পর্বতের সেই চুড়ায়
 
ক্রমাগত নিচ থেকে উপরে

ধারায় বৃক্ষের আদি প্রাণশক্তি
নদীর গতিতে চলে বৃক্ষের দোলনা
 
আর
বাতাসের গর্জন শ্বাস নেই ঘনঘন
অবশেষে সকল কিছু শান্ত হয়
আর প্রকৃতি হয় মায়াবী